এক কাপ চা
এক কাপ চায়ে সন্ধ্যা বিক্রি করবো
গরম ধোঁয়া উঠা চা
মৃদু বাতাসে অন্ধকার নেমে আসলে-
প্রিয়তমার হাতের স্পর্শের চা।
আরামকেদারায় বসে পেয়ালা হাতে
দূরের পাখি দম্পতির বাড়ি ফেরা
ভাবায় পৃথিবীর বুকে কতো রূপভেদ-
কতটা আয়োজনে ধরা সুচারু।
প্রাচীর ঘেঁষা ছোট্ট জারুলগাছে
হুতোম পেঁচার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা
এক পেয়ালা চায়ের সঙ্গে-
জীবনের গল্প মিলাই।
এক কাপ চায়ে রাতটুকু বন্ধক রাখবো
জোনাকি মেয়েদের আলোছায়ায়
জারুলতলার বাঁধানো ছবি দেখবো-
এক কাপে চায়ে রাতের বন্দোবস্ত।
প্রিয়তমার সাথে জাগতে
চা আমার মহামূল্যবান ঔষধ
চায়ের পেয়ালায় চুমুকে-
জাগতিক গল্পের আয়োজন সারবো।
একটা বিকাল ফ্রিতে দিবো
চায়ের আড্ডার নিমন্ত্রণ থাকবে
নতুন দিনের গল্পের বুনিয়াদ-
চায়ের আড্ডায় হউক।
এক কাপ চায়ে সন্ধ্যা বিক্রি করবো
গরম ধোঁয়া উঠা চা
জাগতিক মোহে আবদ্ধ করবে-
প্রিয়তমার স্পর্শে।
জারুলতলার হুতোম পেঁচার ভাবনা হবে
কি এক পাগলরে বাবা
আরামকেদারায় বসে কি যেন বকছে-
এক কাপ চা,চা,চা।
সন্ধ্যার বিক্রি হয়ে গেছে
প্রেয়সীর আয়েশি আদুরে
এক কাপ চায়ের জোগাড়-
জাগতিক মোহে আবদ্ধ আমি।
জন্মদিনে
ক্লান্তিতে শরীরটা বড্ড অবসাদগ্রস্ত
বিরামহীন কর্মযজ্ঞে ভুলে গিয়েছি
ভুলে যাওয়া নিত্য অভ্যাস যেন-
কত কথা যে বেমালুম ভুলে যাই।
অন্তঃপুরে উৎপাত হবে হয়তো
বজ্রনাদে শরীরটা হকচকিয়ে উঠবে
মনোহর রূপিণী ক্রোধাক্রান্ত-
আজ তার জন্মদিন ছিলো।
যথোচিত শব্দের বরষণে
কত যে দোষ আজ উন্মোচিত হবে
কত মানুষের যে তুলনা-
আজ তার জন্মদিন বলে।
অমানিশীথে তারাদের লুকোচুরি
ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে
তবুও জাগতিক সুখানুভূতিতে পরাস্ত-
বেমালুম ভুলে যাই সবকিছু।
অন্তঃপুরে শান্তি চুক্তির আহ্বান
পা টিপে টিপে যাচ্ছি
কোলাহল থেমে গেছে বহু আগে-
ভালো মানুষ বোধহয় এমনই।
বাহুডোরে আবদ্ধ করেই
মৃদুস্বরে দোষ স্বীকারে
বলছি শুভ জন্মদিন-
শুভ হউক আমাদের একসাথে চলাতে।
সকল যাতনা ভুলে
হরিষে শব্দযোগ-তুমি না
তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো-
বহুকাল থেকো কাছে বহু কাছে।
স্মরণে উদিত হয় কত কিছু আজ
কত অপারগতার মাঝে
দিনগুলো চলে যায়-
ক্লান্তি আর ভুলতে ভুলতে।
জড়িমা ভুলে তার সহজ স্বীকারোক্তি
তুমি এমনই ভালো আছো
আমি সব মিছিমিছি বাহানা ধরেছি-
জন্মদিন এইতো বুড়িয়ে যাওয়ার গল্প বলে।
আমিতো সুখে হারাবো
নতুন সৃজনে
তুমি আবদ্ধ করে থেকো-
বহুকাল ঠিক এই ভালোবেসে।
এই জন্মদিনে শুভেচ্ছা নয়
আজ তুমি শেখালে জীবন
ভালোবাসায় আবেশিত আত্মার-
উৎসবের দরকার কেন পড়ে।
অন্তরীক্ষে তারাদের স্বাক্ষী রেখে
চোখ যুগলে আনন্দের অশ্রু
ভিখ মাগি দয়াময়ে-
বহুকাল যেন ঠিকই এইভাবে থাকি।
বরষায়
বরষার বৃষ্টিতে ভিজে আজ একাকার
কথাগুলো জমে আছে
তুমি নেই,নেই যেন বহুকিছু-
গন্তব্য ভুলে গেছি ঠিক যেন দাঁড়িয়ে।
কথাদের বিদ্রোহ,গর্জন আকাশে
আমি যেন আমি নই
অহেতুক ভিজছি গন্তব্য ভুলে বসে-
তোমাকেই খুঁজছি।
কদমের গৃহতলে আমি সন্ন্যাসী
ভেবে পাইনা কিছু যেন
তুমিহীন ভিজছি কেন যে অকারণেই-
বোকাই যেন রয়ে আমি আজও।
বুক পকেটে কদম রেখেছি
সাহসী বনেছি কদমতলে
তুমিহীন আর কতো-
ভিজে যাবো একাকী।
বরষার বৃষ্টিতে গান বাঁধে রসিকে
মেঠুপথে রাখালেরা
আমি যেন কি বুঝে-
কথাদের শাসনে বাঁধা পড়ে আছি।
কোন দিকে যাবো আজ
কতদূর এই পথ
গন্তব্যহীন,তুমিহীন প্রান্তরে-
ভিজো যাবো একাকী।
বরষার বৃষ্টিতে ভিজে আজ একাকার
কথাগুলো জমে আছে
মুক্তি মিলবে কি সত্তার-
তুমিহীন বরষণে।
অদৃশ্যের পথে আমি
তুমি,তুমি তো ঠিক বুঝতে পারো
বহুদূর যাবো আমি,থামবো না-
বরষায় ভিজবো বাড়িতে ফিরবো না।
লুকোচুরি ভুলে তুমি আসো এই বরষায়
রিমঝিম বৃষ্টিতে
ফিরবো দু'জনে-
কথাদের মুক্তিতে বিজয়ী ভাষণে।
তুমি এসো বরষায়
হাত ধরে চলতে
কথাগুলো শুনাবো,শুনতেই হবে যে-
আমিতো আমি নই।
অবশিষ্ট কদমে সাজাবো এলো চুল
পাশাপাশি বহুদূর
না,ফিরবো আলয়ে-
তুমি তো বুঝ ঠিক আমাকে।
বরষায় বরিষণে তুমি
তুমি আসলেই গন্তব্য ফিরে পাবো
কথারা আর জমবে না-
গর্জন থামবে আকাশের।
অসময়ের বৃষ্টি
আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে,
বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,
বেদনাহত টুপটাপ ফোঁটা পতনে-
দুঃখের গীত গাইছে।
পড়ন্ত বিকালে রাখালের বাঁশিতে সুর বাঁধেনি,
ভয়ার্ত আহ্বানে তাকিয়ে রয়েছে অদৃশ্যে,
দিকবিদিকশুন্যে গোরুর পালায়নে-
অসহায় চাহনি বহুদূর বনে।
কালো মেঘের দলের কষ্টেসৃষ্টে,
টুপটাপ ফোঁটা বৃষ্টি ঝরছে,
অসময়ে বৃষ্টি আগমন ঘটেছে-
এখনো স্বপ্নবাজ বালকের বাড়ি ফেরার নাম নেই।
পৃথিবীর অস্বচ্ছল মানুষের মতো একা বৃষ্টি,
বক্ষে শত কষ্টের রেখাপাত,
বিকাল হতেই যেন কেঁদে কেঁদে সারা-
আকাশটার এতো দুঃখ কি করে হলো?
আর্শীবাদে নতশির-উন্মাদ চিত্ত,
অসময়ে বৃষ্টির আগমনে,
কিঞ্চিত আপত্তি অসহায়ের-
মেঘদলের কষ্ট মননে পৌঁছায়নি তার।
হঠাৎ কি বুঝে অঝোরে কেঁদে হয়রান,
বুকে শত বেদনা বুঝি,
অযাচিত অশোভনে বহুদিনের অবকাশ-
বক্ষ ছিঁড়ে টুপটাপ পতন।
আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে,
বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,
জানি না মর্মের বাণী-
বুঝাতে পারিনা আমিও অসহায়।
অসময়ে কাঁদুক মেঘেদের দল,
রাখালের বাঁশিতে মধুরতা হারাক,
পৃথিবীতে অস্বচ্ছল মানুষের বেদনায়-
বৃষ্টি পৌঁছাক তার পক্ষের বারতায়।
চিৎকার
জরাজীর্ণ জঙ্গল ঘেরা ঘরটাতে,
ভয়ার্ত চিৎকার শুনি মাঝে মাঝে,
বহুদূরে দৃশ্যমান প্রকাণ্ড হিজল গাছে-
অশরীরী কোনো ছায়া যেন দুলে ওঠে।
পঁচা পুকুরের পাশ ঘেষা,
কলমি গাছের বেষ্টনীতে আবদ্ধ চারপাশ,
থমথমে দুপুরে কাঁপুনি উঠে যেন-
মরণ চিৎকারে।
বাঁচার আকুতি যেন শুনি,
কোনো ষোড়শী কান্না জড়িত কণ্ঠে,
ঠকঠক করে উঠে আর্ধভাঙা দরজায়-
কি করুণ চিৎকার।
ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখি,
জরাজীর্ণ ঘর থেকে যেন আমায় ডাকছে,
করুণ চিৎকারে-
আমাকে বাঁচাও।
হিজলের ডালে ডানা ঝাপটিয়ে পাখির চিৎকার,
জনমানবহীন ঘরখানা আরও রহস্যময়,
টিনের ছালে যেন বৃষ্টি বরষণ-
মনে হয় নাম ধরে ডাকছে আমায়।
বাঁচাও আমাকে মেরো না,
একদম কাউকে বলবো না,
আঘাতের চিহ্ন সযতনে-
আমাকে মেরো না,বাঁচতে দাও।
ভয়ার্ত চিৎকার শুনি,
ঠিক ষোড়শীর কণ্ঠে,
পাঁজরের ব্যথায় অচেতন হয় এমন স্বরে-
বাঁচতে দাও।
বোধের জাগরণ ঘটে,
রহস্যময় চিৎকারে আহ্বান,
ওদের বাঁচতে দিও না-
যারা বাঁচতে দেয়নি আমায়।
প্রচণ্ড শক্তিতে কেঁপে উঠা ঘরটা থেকে শব্দ আসে,
আমায় যেন অনুনয় করে বলছে,
পরিচিত কতক মানুষের বিচার হউক-
করুণ চিৎকারে বলছে।
আজ প্রতিজ্ঞা করেছি,
ষোড়শীর খুনের বিচার করবো,
নাম বলা পাপিষ্ঠ আত্মার অবসান হবে-
থামবো না এই বলে রাখছি।
জরাজীর্ণ ঘরখানা শান্ত হবে,
বিজয়ের হাসি শুনা যাবে,
ষোড়শীর খুনের বদলায়-
পাপিষ্ঠ আত্মার বিনাশ হবে।
আহমেদ হানিফ
শিক্ষার্থী,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
Social Plugin