আহমেদ হানিফের একগুচ্ছ কবিতা


 

এক কাপ চা



এক কাপ চায়ে সন্ধ্যা বিক্রি করবো

গরম ধোঁয়া উঠা চা

মৃদু বাতাসে অন্ধকার নেমে আসলে-

প্রিয়তমার হাতের স্পর্শের চা।


আরামকেদারায় বসে পেয়ালা হাতে

দূরের পাখি দম্পতির বাড়ি ফেরা

ভাবায় পৃথিবীর বুকে কতো রূপভেদ-

কতটা আয়োজনে ধরা সুচারু।


প্রাচীর ঘেঁষা ছোট্ট জারুলগাছে

হুতোম পেঁচার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা

এক পেয়ালা চায়ের সঙ্গে-

জীবনের গল্প মিলাই।


এক কাপ চায়ে রাতটুকু বন্ধক রাখবো

জোনাকি মেয়েদের আলোছায়ায়

জারুলতলার বাঁধানো ছবি দেখবো-

এক কাপে চায়ে রাতের বন্দোবস্ত।


প্রিয়তমার সাথে জাগতে

চা আমার মহামূল্যবান ঔষধ 

চায়ের পেয়ালায় চুমুকে-

জাগতিক গল্পের আয়োজন সারবো।


একটা বিকাল ফ্রিতে দিবো

চায়ের আড্ডার নিমন্ত্রণ থাকবে

নতুন দিনের গল্পের বুনিয়াদ-

চায়ের আড্ডায় হউক।

 

এক কাপ চায়ে সন্ধ্যা বিক্রি করবো

গরম ধোঁয়া উঠা চা

জাগতিক মোহে আবদ্ধ করবে-

প্রিয়তমার স্পর্শে।


জারুলতলার হুতোম পেঁচার ভাবনা হবে

কি এক পাগলরে বাবা

আরামকেদারায় বসে কি যেন বকছে-

এক কাপ চা,চা,চা।


সন্ধ্যার বিক্রি হয়ে গেছে 

প্রেয়সীর আয়েশি আদুরে

এক কাপ চায়ের জোগাড়-

জাগতিক মোহে আবদ্ধ আমি।






জন্মদিনে



ক্লান্তিতে শরীরটা বড্ড অবসাদগ্রস্ত 

বিরামহীন কর্মযজ্ঞে ভুলে গিয়েছি

ভুলে যাওয়া নিত্য অভ্যাস যেন-

কত কথা যে বেমালুম ভুলে যাই। 


অন্তঃপুরে উৎপাত হবে হয়তো

বজ্রনাদে শরীরটা হকচকিয়ে উঠবে

মনোহর রূপিণী ক্রোধাক্রান্ত-

আজ তার জন্মদিন ছিলো।


যথোচিত শব্দের বরষণে 

কত যে দোষ আজ উন্মোচিত হবে

কত মানুষের যে তুলনা-

আজ তার জন্মদিন বলে।


অমানিশীথে তারাদের লুকোচুরি 

ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে 

তবুও জাগতিক সুখানুভূতিতে পরাস্ত-

বেমালুম ভুলে যাই সবকিছু।


অন্তঃপুরে শান্তি চুক্তির আহ্বান

পা টিপে টিপে যাচ্ছি 

কোলাহল থেমে গেছে বহু আগে-

ভালো মানুষ বোধহয় এমনই।


বাহুডোরে আবদ্ধ করেই

মৃদুস্বরে দোষ স্বীকারে

বলছি শুভ জন্মদিন-

শুভ হউক আমাদের একসাথে চলাতে।


সকল যাতনা ভুলে

হরিষে শব্দযোগ-তুমি না

তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো-

বহুকাল থেকো কাছে বহু কাছে।


স্মরণে উদিত হয় কত কিছু আজ

কত অপারগতার মাঝে 

দিনগুলো চলে যায়-

ক্লান্তি আর ভুলতে ভুলতে।


জড়িমা ভুলে তার সহজ স্বীকারোক্তি 

তুমি এমনই ভালো আছো

আমি সব মিছিমিছি বাহানা ধরেছি-

জন্মদিন এইতো বুড়িয়ে যাওয়ার গল্প বলে।


আমিতো সুখে হারাবো

নতুন সৃজনে

তুমি আবদ্ধ করে থেকো-

বহুকাল ঠিক এই ভালোবেসে।


এই জন্মদিনে শুভেচ্ছা নয়

আজ তুমি শেখালে জীবন

ভালোবাসায় আবেশিত আত্মার-

উৎসবের দরকার কেন পড়ে।


অন্তরীক্ষে তারাদের স্বাক্ষী রেখে

চোখ যুগলে আনন্দের অশ্রু 

ভিখ মাগি দয়াময়ে-

বহুকাল যেন ঠিকই এইভাবে থাকি।





বরষায়



বরষার বৃষ্টিতে ভিজে আজ একাকার

কথাগুলো জমে আছে

তুমি নেই,নেই যেন বহুকিছু-

গন্তব্য ভুলে গেছি ঠিক যেন দাঁড়িয়ে।


কথাদের বিদ্রোহ,গর্জন আকাশে

আমি যেন আমি নই

অহেতুক ভিজছি গন্তব্য ভুলে বসে-

তোমাকেই খুঁজছি।


কদমের গৃহতলে আমি সন্ন্যাসী 

ভেবে পাইনা কিছু যেন

তুমিহীন ভিজছি কেন যে অকারণেই-

বোকাই যেন রয়ে আমি আজও।


বুক পকেটে কদম রেখেছি

সাহসী বনেছি কদমতলে

তুমিহীন আর কতো-

ভিজে যাবো একাকী।


বরষার বৃষ্টিতে গান বাঁধে রসিকে

মেঠুপথে রাখালেরা 

আমি যেন কি বুঝে-

কথাদের শাসনে বাঁধা পড়ে আছি।


কোন দিকে যাবো আজ 

কতদূর এই পথ

গন্তব্যহীন,তুমিহীন প্রান্তরে-

ভিজো যাবো একাকী।


বরষার বৃষ্টিতে ভিজে আজ একাকার

কথাগুলো জমে আছে

মুক্তি মিলবে কি সত্তার-

তুমিহীন বরষণে।


অদৃশ্যের পথে আমি

তুমি,তুমি তো ঠিক বুঝতে পারো

বহুদূর যাবো আমি,থামবো না-

বরষায় ভিজবো বাড়িতে ফিরবো না।


লুকোচুরি ভুলে তুমি আসো এই বরষায়

রিমঝিম বৃষ্টিতে 

ফিরবো দু'জনে-

কথাদের মুক্তিতে বিজয়ী ভাষণে।


তুমি এসো বরষায়

হাত ধরে চলতে

কথাগুলো শুনাবো,শুনতেই হবে যে-

আমিতো আমি নই।


অবশিষ্ট কদমে সাজাবো এলো চুল

পাশাপাশি বহুদূর 

না,ফিরবো আলয়ে-

তুমি তো বুঝ ঠিক আমাকে।


বরষায় বরিষণে তুমি

তুমি আসলেই গন্তব্য ফিরে পাবো

কথারা আর জমবে না-

গর্জন থামবে আকাশের।





অসময়ের বৃষ্টি 



আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে, 

বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,

বেদনাহত টুপটাপ ফোঁটা পতনে-

দুঃখের গীত গাইছে।


পড়ন্ত বিকালে রাখালের বাঁশিতে সুর বাঁধেনি,

ভয়ার্ত আহ্বানে তাকিয়ে রয়েছে অদৃশ্যে,

দিকবিদিকশুন্যে গোরুর পালায়নে-

অসহায় চাহনি বহুদূর বনে।


কালো মেঘের দলের কষ্টেসৃষ্টে,

টুপটাপ ফোঁটা বৃষ্টি ঝরছে, 

অসময়ে বৃষ্টি আগমন ঘটেছে-

এখনো স্বপ্নবাজ বালকের বাড়ি ফেরার নাম নেই।


পৃথিবীর অস্বচ্ছল মানুষের মতো একা বৃষ্টি,

বক্ষে শত কষ্টের রেখাপাত, 

বিকাল হতেই যেন কেঁদে কেঁদে সারা-

আকাশটার এতো দুঃখ কি করে হলো?


আর্শীবাদে নতশির-উন্মাদ চিত্ত,

অসময়ে বৃষ্টির আগমনে,

কিঞ্চিত আপত্তি অসহায়ের-

মেঘদলের কষ্ট মননে পৌঁছায়নি তার।


হঠাৎ কি বুঝে অঝোরে কেঁদে হয়রান,

বুকে শত বেদনা বুঝি,

অযাচিত অশোভনে বহুদিনের অবকাশ-

বক্ষ ছিঁড়ে টুপটাপ পতন।


আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে, 

বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,

জানি না মর্মের বাণী-

বুঝাতে পারিনা আমিও অসহায়।


অসময়ে কাঁদুক মেঘেদের দল,

রাখালের বাঁশিতে মধুরতা হারাক,

পৃথিবীতে অস্বচ্ছল মানুষের বেদনায়-

বৃষ্টি পৌঁছাক তার পক্ষের বারতায়।






চিৎকার


জরাজীর্ণ জঙ্গল ঘেরা ঘরটাতে,

ভয়ার্ত চিৎকার শুনি মাঝে মাঝে,

বহুদূরে দৃশ্যমান প্রকাণ্ড হিজল গাছে-

অশরীরী কোনো ছায়া যেন দুলে ওঠে।


পঁচা পুকুরের পাশ ঘেষা,

কলমি গাছের বেষ্টনীতে আবদ্ধ চারপাশ,

থমথমে দুপুরে কাঁপুনি উঠে যেন-

মরণ চিৎকারে।


বাঁচার আকুতি যেন শুনি,

কোনো ষোড়শী কান্না জড়িত কণ্ঠে,

ঠকঠক করে উঠে আর্ধভাঙা দরজায়-

কি করুণ চিৎকার।


ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখি,

জরাজীর্ণ ঘর থেকে যেন আমায় ডাকছে,

করুণ চিৎকারে-

আমাকে বাঁচাও।


হিজলের ডালে ডানা ঝাপটিয়ে পাখির চিৎকার,

জনমানবহীন ঘরখানা আরও রহস্যময়,

টিনের ছালে যেন বৃষ্টি বরষণ-

মনে হয় নাম ধরে ডাকছে আমায়।


বাঁচাও আমাকে মেরো না,

একদম কাউকে বলবো না,

আঘাতের চিহ্ন সযতনে-

আমাকে মেরো না,বাঁচতে দাও।


ভয়ার্ত চিৎকার শুনি, 

ঠিক ষোড়শীর কণ্ঠে,

পাঁজরের ব্যথায় অচেতন হয় এমন স্বরে-

বাঁচতে দাও।


বোধের জাগরণ ঘটে,

রহস্যময় চিৎকারে আহ্বান,

ওদের বাঁচতে দিও না-

যারা বাঁচতে দেয়নি আমায়।


প্রচণ্ড শক্তিতে কেঁপে উঠা ঘরটা থেকে শব্দ আসে,

আমায় যেন অনুনয় করে বলছে,

পরিচিত কতক মানুষের বিচার হউক-

করুণ চিৎকারে বলছে।


আজ প্রতিজ্ঞা করেছি,

ষোড়শীর খুনের বিচার করবো,

নাম বলা পাপিষ্ঠ আত্মার অবসান হবে-

থামবো না এই বলে রাখছি।


জরাজীর্ণ ঘরখানা শান্ত হবে,

বিজয়ের হাসি শুনা যাবে,

ষোড়শীর খুনের বদলায়-

পাপিষ্ঠ আত্মার বিনাশ হবে।



 

আহমেদ হানিফ

শিক্ষার্থী,

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।