১.
ঝাউবনের ধ্রুবতারা
কচুপাতায় জমা শিশির তুমি, টলমল
নয়নে দেখছো মেঘলা আকাশ। ঠোঁটে
আঁধফোটা রডোডেন্ড্রনের মতো মৃদু হাসি।
বুর্জোয়া বাতাস তোমার প্রথম যৌবন, যেন
ল্যান্ডস্কেপে আঁকা ঝাউবনের ধ্রুবতারা। তুমি
কখনো অধরা অপ্সরা, কখনো অতিন্দ্রীয়
স্পর্শের বাতিঘর। মেটাফিজিক্যাল সমুদ্রে
দোল খাওয়া জলকণ্যা তুমি। তোমার মন
সে তো ঝর্ণার মতো স্বচ্ছ তবুও বিচ্ছিন্ন-
আনবিক কণার মতোই যার স্থিতি, এই
দেখি রসালো ইশারা- এই বিষাদের রেখা..
পাহাড়ি গুল্মের মতো বক্র তোমার অলিগলি।
তবুও তুমি আরাধ্য। মন নিয়ে ক্রিড়া যদিও
তোমার প্রিয় সখ। তথাপি, নাবালক শিশুর
মতো কেঁদে কেটে পেতে চাই উষ্ণ স্নেহ। তুমি
আফগানি আঙুরের মতোই। লুকিয়ে রেখেছ
স্বর্গীয় প্রেম ঘোমটার আড়ালে। আমি তাই
হতে চাই সাহারার বালুঝড়। উড়ো স্রোতের
আলিঙ্গনে মুড়িয়ে রবো তোমার আঙুরীয় মন।
এ যদি প্লাটনিক চাওয়া হয়, তবে জেনে রেখো
বর্ষণে যদিও ঝরি, তবু স্মৃতিতে রবো ঠিকই
তুমি ভুলে যাও, ক্ষতি নেই- আমি বাষ্প হয়ে
আবার জল রুপেই ফিরবো তোমার কোটরে।
২.
সলিলকি
স্মৃতি যখন উঁকি দ্যায় জানালায়
থাকেনা অস্বীকার করার দায়
খুলে দিতে হয় ধাতব পাল্লা
শিশুর মতো বাহু ঝাপটে,
আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে-
চুম্বনে চুম্বনে বুঝিয়ে দিতে হয়,
এ দেহ মন সবটাই শুধু তাঁর
সবাই কি তবে ভুলে গ্যাছে?
সবারই থাকে অভেদ্য কর্মলেখা,
থাকে অন্তরে ভাঙনের স্রোত
যেমন জন্মের রক্তাক্ত কান্নার দাগ
নিঃশ্বাসের মতো মিশে থাকে-
সুখ দুঃখের গল্পের ন্যায় জীবনে
আমি নিজেকে ভাঙতে চেয়েছি
মেঘের সানশেডে ভেসে-
ছড়াতে চেয়েছি প্রেমের বৃষ্টি
কখনো কোমল প্রলয়ের আঘাতে
আঁকতে চেয়েছি গভীর এক ক্ষত
ভূগর্ভে জমে থাকা ক্ষুধা যেমন
ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে
মুহুর্তেই যেন সম্বিত ফিরে আসে
দেখি, অনন্ত নিস্তব্ধতা বুকে নিয়ে
মেঘের সাথেই যেন করছি সলিলকি
মৃত্যু, তুমি কি শুধুই স্মৃতির সমাধি?
নাকি নবপ্রভাতের ভ্রুণায়িত সূচনা?
৩.
স্মৃতিভ্রমের স্মৃতি
গোধূলির আভা, সন্ধ্যার স্নিগ্ধতা
প্রেয়সীর মতো পূর্ণিমা রাত
বাতাসে কামিনীর কামনা সৌরভ
ছ্যাদলা পড়া ছাদের কার্নিশে
মুখোমুখি অতীতের হারানো সুখ
তুমি এবং তোমার লজ্জিত মুখ
যেন বর্তমান নিঃসঙ্গতার সাথে
রঙিন অতীতের টেলিপ্যাথি
অসম কল্পনার সরল যোগাযোগ
এ কি স্মৃতিভ্রমের উত্তেজনা?
নাকি সহজাত তাড়নার উদ্দীপনা?
প্রশ্নের সীমাহীন যন্ত্রনায় বিপর্যস্ত
মনে রাতের মতো অন্ধকার
পাওয়া কিংবা না পাওয়ার ফর্দ
বাড়িয়ে যায় সমীকরণ শুধু
অথচ এ রাতের মতো একদা
প্রতিরাতে ছিল জোৎস্নার গুঞ্জন
যদিও এখন শূণ্যতা চারিধারে
তবু মন কারে খোঁজে অভিসারে?
সুমন রেজার জন্ম ১৯৯৮ সালে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায়। শিক্ষাজীবন শুরু সেখানেই। সম্প্রতি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে কর্মরত আছেন একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে সাব এডিটর হিশেবে।
শৈশব থেকেই বই পড়ার অভ্যাস। সাহিত্যের প্রতি তৈরি হয় অকৃত্রিম ভালোবাসা ও টান। সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশ পায় প্রথম কবিতা। তখন থেকেই নিয়মিত বিরতিতে লিখে চলেছেন। বিশেষত উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সাহিত্য সাধনা করে চলেছেন। বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর কবিতা, ছোটগল্প এবং কলাম। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও সমানে লিখে চলেছেন তিনি। প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোও। শিল্প সাহিত্যের সাধনাকে প্রেম হিশেবে জেনে এর চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান তিনি।
Social Plugin