মাহমুদা তাহিরার তিনটি কবিতা



১. বিকলাঙ্গ 


এমন সব দুপুর আসে,

রশিতে ঝুলতে থাকা ওড়নার আহবানও প্রত্যাখান করি, 

কোনো দিকে যেতে মন লাগে না।


পলেস্তার খসতে থাকে হৃদয়ের কুহরে;

বিরক্তি, বিরক্তি, সব গুটাই রেখে বসে আছি

অগোছালো, পুরনো প্রেমের তাবেদারি আর করছি না।


এমন কিছু দুপুর আসে, 

প্রত্যাশার চাইতে বেশি বৃষ্টি হয়, জৈবনিক দ্বিধার সাথে

হেলেদুলে বব নাচায় বাবুই পাখির বাসা,

স্মৃতিদের হামাগুড়ি হাঁটু ভাঙ্গছে তালপাতায়, ভাঙ্গুক;

ভুলে গেছি, বেঁকে বসেছি, উত্তেজনাকে শিথিল করে

ভেঙ্গে দিয়েছি পা, বিকলাঙ্গ আমিকে আজ রাত্রিকালীন

বিছানার — সঙ্গী কোরো না। 




২. নীল নদ


বড় হয়ে যাওয়াটাই একটা কেলেঙ্কারি;

বড় হয়ে গেলে জানতে পারি নীল নদের পানি নীল নয়।

বড় হয়ে যাওয়ায় তোমার প্রেমে পড়ি, টিএসসির বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দু'টি কাক হতে সাধ হয়, দোলনচাপার গন্ধ শুঁকে খামচে ধরতে চাই শার্ট, বৃষ্টির দিনে তোমার হাত কেন হাতে পাবো না? না পাওয়ার মুহূর্তরা কখনো মরুভূমি, কখনো সলিড পিরামিড।


তোমাকে দেখলে তাই নদীর ঘ্রাণ পাই, আর একটা নীল নদ — তোমার চোখের ভেতর গিয়ে সাদা হয়ে যায়।




৩. ফিলিস্তিনি শিশু


মাখা মাখা হলুদরঙা ভাতের থালা ফেলে রেখে হারিকেনের সলতে নিয়ে খেলায় মাতোয়ারা হতে পারে কেবলমাত্র শিশু। আর তাদের ফেলে রাখা সেই কাসার থালার দিকে তাকালে দ্যাখতে পাওয়া যায় শ'খানেক প্রতিফলিত চেহারা। যাদের দুধ-দাঁতের ফাঁক আর কমলার কোয়ার মতন দুই ঠোঁট বেয়ে মাটিতে টপাটপ পড়তে থাকে দুই..তিন...চার ফোঁটা জল। আর সেই জল, মাটিতে খেলা করে করে গড়ে তুলে এক নিষ্পাপ মুখের আদল, যার অবয়ব এমন — যেন সারা দেশে তার সাদৃশ্য নিয়ে হলো যুদ্ধ শুরু, হলো তোলপাড়। কারো দাবি সেই আকৃতি নির্ঘাত মুহাম্মদের, কারো দাবী কৃষ্ণের, কেউ নিশ্চিত এ স্বয়ং — যিশু।


আমি যদিও সেই যুদ্ধ চোখে দেখি না, নাকে শুঁকি না মিসাইলের গন্ধ, মুখে বলি না কোনো অটোক্রেটের নাম, কেবল রাতের নিস্তব্ধতা পতিত হয় ফজরের আযানে, থরেথরে কান্নায় মাতোয়ারা আসমান। কান্না শুনি, কান্না গিলি, কান্না গাই তার তরে — থালার অভাবে এই পৃথিবীতে আটকে পড়েছে যে। এই মারমার কাটকাট ধর্মান্ধ যুদ্ধ নয়, আমাকে বরং কাঁদিয়ে তুলে — অনাহারি এক ফিলিস্তিনি শিশুপ্রাণ।