হাসিন এহ্সাস লগ্ন’র একগুচ্ছ কবিতা

 


১.দুধরাজ হবার বাসনায় দুধেল দুঃখে সোনাপাখি আমার•




‘আহারে আহারে!

(কে তার) বিষের শিশির বোতল-হৃদয়ে

মেরি গো রাউন্ড খ্যালে!


কোথা হইতে আইলো সেই

মুন-সাইজ্ড্ দুধের ধবল জোৎস্না?

কে দিলো তারে অমৃতীয় আহ্বান,

আর কেনই যে নিলো না!


ডায়েট কোক, জিরো ক্যালরি চেনেনি তো পাখি আমার!

তবু খালি ফুল-ফ্যাট দৃষ্টিতে যায় পুইড়া—

একটা মেল্টিং চিজ-দুঃখ

অর জিভে ল্যাপ্টায়ে থাকে।


পুঁথির পাতার সোনাভান

যার মুতের তোড়ে তুরাগ হইলো

সেই সোনাভান-জাতিস্মররে ভালোবাইসা

বালির বস্তা-দুধের ভিত্রে চাপা পড়ার খায়েশ নিয়া

বুকের ভিতরে ওভারকুক্ড্ হাহাকার

সোনার আমার।


একটা ফ্রায়েড ডিজায়ার কুঁকড়ায়ে গেছে তার,

সোনাভানের জিম প্লেলিস্টে যেহেতু শুধু—

নো পেইন, নো গেইন!


দুধের ভারী দাম।

লেফ্টচোদাও রাইটে যায়

দাম দিতে চায়া।

মাগীমুখ মরদ-মরদ হইলেও

দুই মণের কিসমিসি দুধ। 

আয়হায় হায়!

ঢুইকা যাই যাই

যেমনেই পারি!


কে দেখসে কবে

গোল্ডফিশের ঘিলু যার

দুধে তার পিস্তাশিওর পেস্ট?


পাখির আর কতটা সুগার ক্রাশ হবে?

কোথায় গেলে থামবে এই কার্বোহাইড্রেট গ্রিফ?

হে চাঁদের মতোন ভারী অনাদর,

একদিন আমিও হবো জিরো গ্র্যাভিটি,

নিখোঁজ,

নিছক ব্ল্যাক হোলের কান্নায়!

আর বর্জ্যের কাব্যগীতিতে 

সিন্থেটিক নস্টালজিয়া নিয়া।’




২.একটাই কবিতা•




‘এইরকম বিকেল পায়ে ধুলো মেখে বসে থাকে।

সূর্যের ঘাড়ে জমা অন্ধকার দেখতে দেখতে

লেবু চা’র ভাপে দেখি

আঙুলের ছায়া।

জিভের নিচে

সুগন্ধী গুল্ম গজায় শুধু।


আমার পেন্ডেন্টে নেফারতিতি।

‘উত্তরাধুনিক কবিতায় এ-ই কি সবসময় উড়ে বেড়ায়?’

সুন্দর প্রশ্ন তোমার। সহজও।

সেই ধরনের কবি হ’লে কি বলতাম,

‘এই বিরিয়ানির চালের ভিত্রে

চাপা পইড়া আছে

এক মৃত স্বৈরাচারী,

আমরা চামচে তুইলা

তার শাসন খায়ালাই?’

তোমাকে খেতে দেখে এসবই ভাবি শুধু।


বেঞ্চে বসে থাকি,

একটা গাছ মাটির দিকে ঝুঁকে আসে,

বলে, বলবি—

‘চুষতে ইচ্ছা করে।’

সন্ধ্যা নামতে নামতে

আমি আগুনের মেয়ে,

খেতে চাই

মাংসের নিচে

বুকের হাড় পর্যন্ত।


তোমার গলায় ঝুলে আছে

একটা নদী।

আমি তারপর জল হতে চাই,

ভিজে যেতে চাই।


ক্রমশ সমস্ত গাঢ় হ’লে

আই হ্যাভ টু চিউ

গ্রেপ ফ্লেভার্ড গামের মতো

লম্বা ক’রে টেনে

তারপর গেলা।

তারপর চা’র কাপের ভেতর

সবকিছু ধোঁয়া।’




৩.‘উত্তর-শরীর, ধানগন্ধ’ থেকে•




‘ধান শুকোচ্ছে উঠোনে,

তুমি বললে—

শরীর থেকে গন্ধ উঠছে কেমন!

আমরা চুপ করে মাটি ছুঁয়ে থাকি।

জানলার কাঠে পেঁয়াজের খোসা উড়ে যায়।

নাভির কাছে শিশির জমে।

আর কাদামাখা হাত রাখে কেউ পাঁজরে—

যেন পরীক্ষা করে দেখে নিচ্ছে,

এই জমিতে ফসল ফলবে কি না।


দিনাজপুরের ফেলে আসা গাঁ’র মাঠে,

ছেলেটা প্রতিদিন লাঙল টানে,

মাটির গভীরে ঢোকে তার চিন্তাহীন হাঁটু,

আমরা কেউ জানি না—

সে কার বীজ নিয়ে এমন কামনায়

থেমে থেমে হাঁপায়! 


এরকমই দিনাজপুরের ফেলে আসা গাঁ’য়

ঠোঁট লাগিয়ে দিয়েছিলো এক কিশোর,

সে জানতো না,

ধানের গন্ধে আমি কাম পেয়ে যাই।


বৃষ্টির পরে মাঠে দাঁড়িয়ে

পিঠ দেখালো সে—

মাটি মেখে, লাঙলের রেখা বয়ে গেছে সোজা শিরদাঁড়ায়।

আমি তাকিয়ে থাকি।

যেন ওর মেরুদণ্ড ধরে নামছে জল,

আর সেই জলে ভেসে যাচ্ছে আমার ভেতরের সমস্ত গোপন আহ্লাদ।


পেঁয়াজক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলো,

এই গন্ধটা তোমার মুখে থাকুক সারারাত।

আমি জানতাম,

গন্ধ মুখে রাখলে সেটা আর কথা থাকে না,

শুধু রস হয়ে ঘুরতে থাকে জিভের নিচে।

ও বুঝতে পারেনি,

পোকারা কখনও পাখা মেলে না আলোয়—

ওরা কাম করে,

একটা গোপন গর্তে ঢুকে গিয়ে

বীজ রেখে যায়।


ঘরের মেঝেতে কাদা ঢুকেছে,

আমার হাঁটু কেমন মিহি হয়ে উঠেছে—

তুমি বলো,

এই কাদার ভিতর দিয়ে হাঁটলে কি আর পুরোনো শরীর ফিরে আসে?

আমি কিছু বলি না,

শুধু মনে মনে হিসেব করি,

তোমার হাত কতবার ঢুকেছে আমার পিঠে

ধান চাষের ছুঁতোয়।


শিশির পড়ে গেছে সিঁথির চুলে,

আর তুমি তখন

মাটি থেকে আমার গন্ধ শুঁকে বলছো—

এই বছর ফলন হবে না।

আমি চুপ করি।

এই চুপের নিচে ঘুরপাক খায় জলপোকা।

আমার কোমরের ঠিক ওপাশে

ধানজমির এক টুকরো শুকনো কুসুম জেগে থাকে।


তুমি যদি জানতে—

এই শরীর শুধু কর্ষণের জন্য নয়,

নিজেই সে এক মৌসুমী ব্যর্থতা।

তুমি যদি শুধু দেখতে—

আমার দুধ না ওঠা বুকে

কীভাবে রাতভর জেগে থাকে

মাঠ ফেলে আসা ছেলেটার আঙুলের ছাপ!


কবে তুমি বুঝবে,

প্রতিবার আমি ধান ছিলাম না।’