গাফেল
খোদার কাছে রহমত চাওয়ার বদলে
চাইলাম তোমারে।
সেজদায় কপাল নোয়াইতে হইলাম গাফেল।
অথচ তোমারে একনজর দেখতে
গাফলতি করি নাই কোনোদিন।
তুমি তুমি বইলা আওড়ানো কন্ঠস্বর
ভুইলা গেল প্রভুর নামের তসবিহ।
তোমারে চাইতে চাইতে
পার হইলো কতো কতো ক্বদর।
মাঝরাত্তিরের ব্যাথাতুর সময়টাতে
মোলায়েম জায়নামাজ বিছানোর বদলে–
বিছাইলাম তোমার নামের এবড়োথেবড়ো মাদুর!
তুমিবিহীন এক আওয়াবিনের ওয়াক্তে
আমি মালুম করতে পারলাম–
যারে পাওয়ার লাইগা হারাইলাম খোদা রে
না পাইলাম খোদা, না পাইলাম তারে!
সুবিধাবাদী
যারে আসমান ভাইবা আঁকড়াইয়া ধরো–
সে আসলে মেঘ।
ভালো আবহাওয়া পাইলে উইড়া যায় সে।
কায়দা
আমি হরকতের মতো সাবলীল।
আর তুমি যেন খটকা তাশদীদ।
আমি সাকিন হয়ে সহজেই থামি।
আর তুমি ওয়াক্বফের নিয়মের মতো দুর্বোধ্য।
কোথায় থামবো, কোথায় মিলিয়ে নিব–
তা বুঝতেই ভুল করি আমি।
আমি দাল হরফ।
ভালোবাসা দিলে প্রতিধ্বনিত করি
ভালোবাসারই বুলি।
তুমি দ্বোয়াদ এর মতো গম্ভীর।
যার সহীহ্ মাখরাজ শিখতেই
নেমে আসে গোধূলি।
হাকিম
আমার সব ভুলের নালিশ
আমাদের ঠোঁটের আদালতে জমা দিও।
ওরা নিজেরা মিলে সমঝোতা করে নিবে!
বুলেটবিদ্ধ প্রেম
টিয়ারশেলের তোপে পড়ে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না।
আমি চোখ তুলে তাকাতে পারি না।
দম বন্ধ হয়ে আসার মুহুর্তে তোমার কথা ভেবে আবার বেঁচে ফিরি।
ডজনখানেক রাবার বুলেট আমার কিছু করতে পারবে না– আমি জানি।
কিন্তু তোমার স্পর্শকামী ঘাড়ে রাবার বুলেট বিঁধে গেলে–
বদলে যাবে তোমার ভালোবাসার মানচিত্র।
ঘাতকের বন্দুকের নল আমি তোয়াক্কা করি না।
কিন্তু যে বুকে তুমি থাকো—
ঐ বুক ছিদ্র হওয়া নিয়ে আমার ভয় হয়।
তোমার নিরাপত্তাহীনতায় আমি শঙ্কিত হই।
শ্লোগানে মত্ত থাকা ঠোঁট শুকিয়ে আসে।
তোমার ঠোঁটের দিকে এগুতে গিয়ে আবার থমকে যাই।
ভালোবাসতে কার্পণ্য করি— তা কিন্তু না।
স্বৈরাচারের মতো তুমিও আমায় ভুল বুঝো না।
যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র নামিয়ে নিলে— অসম্ভব হয়ে উঠবে মুক্তি।
মুক্তি ব্যাহত হলে বন্ধ হয়ে যাবে টঙের দোকান,
রিকশার চাকা এমনকি আমাদের নিঃশ্বাস।
আখেরি ফাতাহ শেষে আমরা আবার মিলিত হবো।
মাথাভরা বিপ্লব নিয়ে প্রেম রাঙানো যায় না।
সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ উপেক্ষা করে ভালোবাসি বলা বেমানান।
সাকিব মাহমুদ রুমী ২০০২ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর– প্রকৃতির সাবলীল সৌন্দর্য বেষ্টিত জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ধানদী গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ছয়হিস্যা গ্রামে। পিতা জাকির হোসেন শিকদার ও মাতা কুলসুম আক্তার সহ দাদা-দাদি এবং কাকাদের সাথে যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠেন। যৌথ পরিবার ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে চাঞ্চল্য ও নানামুখী আগ্রহ সৃষ্টি করে। প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের পাশাপাশি সাহিত্য, সংগীত, বিতর্ক, আবৃত্তি সহ নানা অঙ্গনে নিজেকে তুলে ধরেন। এসবের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একাধিক জাতীয় পুরস্কার। একইসাথে অলংকারপূর্ণ বক্তব্য প্রদানে ও রাজনৈতিক ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের রাজপথে অন্যতম অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। রুমী পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য বিভাগে। তার প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সংগঠন ‘লিখবে বাংলাদেশ’ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘না পাইলাম খোদা, না পাইলাম তারে’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
Social Plugin