নাজমুল হুদার একগুচ্ছ কবিতা


 

যারা থেকে যায়


জীবনের পথচলা বড়ো একাকী, জানো?

সেখানে হাতে গোনা কিছু মানুষ থাকে,

যারা চায় না শুধু সকাল–

তারা চায় বিকেলের ম্লান আলোতেও পাশে থাকা।


তারা জানে, চলে যাওয়া মানে সব ফুরিয়ে যাওয়া নয়,

যারা থেকে যায়—

তাদের চোখে হঠাৎ জল জমে,

কিন্তু তারা বলে না কিছুই,

শুধু হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে।


আমার প্রার্থনায় তুমি থেকেছো ঠিক সেইরকম করে,

যেন একদিন

জীবনের একেবারে শেষ ছায়াটুকু পড়লেও—

তুমি থেকে যাবে পাশে,

আর আমি তোমার দিকে তাকিয়ে বলবো,

“চলো না, বাকিটুকু চুপ করে হেঁটে যাই।”


তুমি যদি একদিন হারিয়ে যাও,

তবে রেখে যেও একটুখানি উষ্ণতা,

তোমার নাম লেখা আমার মুঠোর রেখায় যেন চিরকাল থাকে।




আলো ছুঁয়ে থাকা তোমার নাম


যে দিন শহরের আলো নিভে গিয়েছিল,

আমি তোমার চোখে দেখেছিলাম এক ফালি সকালের ছবি।

চুলের ফাঁকে হেলে পড়া চন্দ্রবিন্দু যেন বলেছিল—

“ভয় নেই, আমি আছি,

অন্ধকারে হাত ধরে রাখব…”


তুমি আসলে, 

আর চারপাশ ঝিরঝিরে হাওয়ার মতো শান্ত হয়ে যায়।

তোমার গলার স্বরেই বাজে মোমবাতির দীপ্তি,

আর আমি—

আমি কেবল এক ক্লান্ত পথিক, তোমার ভিতরেই খুঁজি নিজের ঠিকানা।


তুমি আমার আলো,

অথচ নিভিয়ে দাও সমস্ত অন্ধকার—

যেমন কবিতা নিভিয়ে দেয় অবসাদের দীর্ঘ রাত,

যেমন প্রেম ছুঁয়ে যায় মৃত শহরের দেয়ালে।


তোমার নামই আমার প্রার্থনা,

তোমার নামেই ঢেউ খেলে যায় বুকের ভিতর—

একটা নরম আলো হয়ে।




তুমি বসে ছিলে


তুমি বসে ছিলে একা ভিড়ের ভিতর,

মাথা নিচু, যেন চুপ ছিলে খুব।

বাতাসে ধুলোর ঘ্রাণ, দূরে জানালা—

রাত্রির ছেঁড়া আলো এল ছুঁয়ে রূপ।


তোমার পাশে কেউ নেই—তবু ছিলো সব,

লোক উঠে দাঁড়ায়, নামেও কোথাও—

কেউ জানে না, কার চোখে কার কান্না

শব্দহীন হয়ে নামে বুকের গভীর নাও।


তুমি হয়তো জানো না, আমি ছিলাম পাশে,

তুমি তাকাওনি—তবু সেই একবার

তোমার হাত কাঁপে, আমার মনও

দুলে উঠেছিলো মৃত শতাব্দীর ভার।


এই শহর ঘুমোয় না, তবু স্বপ্নে ডুবে—

চেনা ট্রেন যায় হারিয়ে যায় ফের—

তবু তুমি ঠিক থেকে যাও আমার,

তোমার চুলের গন্ধেই জেগে ওঠে দুপুরের ডেক।


তুমি বুঝবে না, কবে কোথা থেকে

ভালোবাসা আসে, বা ফুরোয়, কিংবা পোড়ে—

তবু আমি জানি—তুমি বসে ছিলে,

আমারই জীবনের এক সন্ধ্যে-ভোরে।





নাজমুল হুদা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়